আমার প্রাণপ্রিয় অগ্রজ আমার ছোট ভাইয়ের কাছে অনেক বছর আগে শুনা একটা গল্প। মুসা (আঃ) যখন শুনলেন যে উনার বেহেস্তের সঙ্গী হবে এক কসাই তখন নবী হিসেবে উনি কিছুটা বিস্মিত হয়ে সেই কসাইয়ের খোঁজ করেছিলেন। এটা দেখতে কি সে গুনাবলি যা ঐ কসাইয়ের আছে যা তাকে বেহেস্তে একজন নবীর সান্নিধ্য-সোহবত লাভে ধন্য করবে। অনেক আলেম যেমন মাওলানা তারিক জামিলের মতে গল্পটি সঠিক আবার অনেকে মনে করেন ওটা ইহুদিদের বানানো গল্প। আল্লাহু 'আলাম-আল্লাহ ভাল জানেন। কুরআন অনুযায়ী সম্মানিত হল তারা যারা আল্লাহকে অত্যধিক ভয় করে অর্থাৎ যার তাকওয়া যত বেশি সে আল্লাহ্র কাছে ততোধিক সম্মানিত। (সুরা হুজুরাতঃ১৩)। অনেকদিন পর মুসা (আঃ) এর সে ঘটনাটি স্মরণ করে ভাবলাম বক্ষ্যমাণ ঘটনাটি আপনাদের সাথে শেয়ার করি। ঘটনাটি আঙ্কারার ছোট একটি মসজিদের ওয়াশ রুমের পরিষ্কার- পরিচ্ছন্নতাকর্মী এক মুমিনকে নিয়ে।
আলহামদুলিল্লাহ! বিভিন্ন সরকারী সফরে আমাদের দলের মধ্যে একটা বিষয় ছিল খুব কমন - সর্বজনীন। যেকোনো জায়গায় গিয়ে আমরা প্রথমে নিকটস্থ মসজিদের খুঁজে স্মার্ট ফোনে গুগল ম্যাপ বের করতাম। কাছাকাছি কোন মসজিদ না পেলে কিবলার দিক নির্ণয় করতাম। আমার মত যারা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে ততটা পারঙ্গম নয়, বাকিরা, বলা চলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে দিক নির্ণয় করে আমাকে সাহায্য করত; নতুবা একে অপরেরটা মিলিয়ে সঠিক মসজিদ বা কিবলা নিশ্চিত করতো। কারণ ছিল এমন যে আমরা মসজিদে জামাত ধরতে পারলে শামিল হতাম নতুবা সবার অনুরুধে আমাকে দিয়ে আল্লাহ্ ইমামতি করাতেন। এভাবেই সেদিন মাগরিবের সময় খুব কাছে চলে আসায় সবাই যার যার মোবাইল দিয়ে সবচেয়ে কাছের মসজিদের খুঁজ করছিলাম। কিছুক্ষণের মাঝে পেয়েও গেলাম। কারণ, ওটা গত কয়েক বছরে কামাল পাশার সেকুলার প্রজাতন্ত্র থেকে বদলে যাওয়া প্রেসিডেন্ট এরদগানের তুরস্ক। তাঁর উপর রাজধানী শহর। অনেকের মতে ওসমানীয় খিলাফতের স্বর্ণযুগ হৃত গৌরব ফিরে আসার মাহেন্দ্রক্ষণ। যদিও স্থানীয় এক থিংক ট্যাঙ্ক সংস্থার সাথে আমাদের গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত জনৈক প্রফেসর আক্ষেপ করে বলেই ফেললেন যে আমাদের প্রেসিডেন্টের কাছে নতুন কোন প্রোজেক্ট এর জন্য টাকা না থাকলেও মসজিদ তৈরি বা মেরামতের টাকার অভাব নেই!
স্বভাবতই সালাতের আগে ইস্তিঞ্জা এবং অজু করার জন্য আমরা যখন ওয়াশ রুমের খুঁজ করছিলাম, তখন ষাট কিংবা সত্তর ঊর্ধ্ব শ্মশ্রুমণ্ডিত এক ভদ্রলোক দরজা থেকে আমাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে গেলেন। উনার প্রতিটি পদক্ষেপে আল্লাহ্র প্রশংসা ও যিকির করছিলেন। উনার আরবি উচ্চারণ শুনে উনাকে তুর্কি মনে হচ্ছিলনা। আমার ভাঙ্গা ভাঙ্গা আরবি আর তাঁর চেয়েও আরও দুর্বল তুর্কি ভাষায় জিজ্ঞেস করলাম উনি আরব কি না? উনি চাবি দিয়ে খুব পরিষ্কার দুটো ওয়াশ রুম আমাদের জন্য খুলে দিয়ে বললেন যে উনি সিরিয়ান উদ্বাস্তু। দামেশকের কাছাকাছি কোন একটা উপ শহরে উনি প্রথমে মুয়াযযিন এবং পরে একটা মসজিদের ইমাম ছিলেন। সিরিয়ার উপর আপতিত গৃহযুদ্ধের ভয়াবহ পরিস্থিতিতে নিজের ঈমান আর প্রাণ রক্ষায় পরিবার পরিজন নিয়ে অনেক শহর-গ্রাম, পাহাড় – পর্বত, মরুভুমি- মরূদ্যান ডিঙ্গিয়ে অনেক পথ পরিক্রমায় নিতান্ত বাধ্য হয়ে শেষমেশ আঙ্কারায় এসে পৌঁছান। এটুকু বলে উনি আবার ওয়াশ রুমের কোনে নির্ধারিত উনার চেয়ারটিতে ফিরে যিকিরে মশগুল হলেন। আমার কানে উনার মুখনিঃসৃত আয়াত গুলো গুনগুন করে বেজে চলছিল।
ইস্তিঞ্জা ও অজু শেষে নির্ধারিত কয়েন এর চেয়ে কিছু বেশি বাক্সে ফেলে আমি আবার উনার সাথে কথা বলতে, আসলে উনার আরও কথা শুনতে চাইলাম। আরও কিছু প্রশ্ন করলাম। যতদূর মনে পড়ে উনি সুললিত কণ্ঠে সুরা বাকারার ১৫৩ থেকে ১৫৬ আয়াত তিলাওয়াত করে আমার প্রশ্নের উত্তর দিলেন। যার সরল বাংলা অর্থ হলঃ
"সুতরাং তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদের স্মরণ রাখবো এবং আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর; অকৃতজ্ঞ হয়ো না। হে মুমিন গন! তোমরা ধৈর্য্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চিতই আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের সাথে রয়েছেন। এবং অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের। যখন তারা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে, নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাবো। তারা সে সমস্ত লোক, যাদের প্রতি আল্লাহর অফুরন্ত অনুগ্রহ ও রহমত রয়েছে এবং এসব লোকই হেদায়েত প্রাপ্ত।" (সুরা বাকারাঃ ১৫৩-১৫৬)।
লেখকঃ আবু আমনুন সায়্যিদ।
সম্পূর্ণ লেখা পড়তে "DOWNLOAD PDF" বাট্নে এ ক্লিক করুন।
0 Comments
Post a Comment